জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রফেশনাল বিবিএ ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে কিছু কথা শেয়ার করতে চাই। এটাকে ২টি পর্বে ভাগ করলাম। আজকে ১ম পর্ব যেখানে ভর্তির আগে কিছু নির্দেশনামূলক কথা থাকবে। এবং পরের পর্বে ভর্তি পরবর্তী শিক্ষাজীবন কিভাবে এগিয়ে নেয়া যায় সেই ব্যাপারে বলবো।
আশা করি, সবাই ভালো ও সুস্থ আছো। সরাসরি মূল কথায় আসি, তোমাদের অনেকেই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স না পাওয়ার পর একরকম মনোকষ্ট নিয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসো। যাদের আর্থিক সংগতি ভালো তারা হয়ত প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে admission নিচ্ছ। তবে বেশিরভাগ ছাত্রই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার পর কেউ অনার্স, ডিগ্রি বা প্রফেশনাল কোর্সে ভর্তি হচ্ছো। একজন প্রফেশনাল বিবিএ এর সাবেক ছাত্র হিসেবে আজকে তোমাদের সাথে কিছু বিষয় শেয়ার করবো যা তোমাদের ভালো একটা কলেজে ভর্তি হবার জন্য পাথেয় হবে। পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত তোমার তুমি কোথায় ভর্তি হবে।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কারিকুলামে নতুন এক মাত্রা যোগ করেছে এই প্রফেশনাল কোর্স (Professional BBA, Professional CSE) । তবে শুধুমাত্র প্রাইভেট জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধীনস্থ কলেজে এই কোর্স চালু আছে। সরকারী জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধীনস্থ কলেজে প্রফেশনাল কোর্স নেই। অর্থাৎ ব্যক্তি মালিকানাধীন কলেজগুলোতে প্রফেশনাল কোর্স চালু আছে। কিন্তু বেশিরভাগ কলেজই এই প্রফেশনাল কোর্স নিয়ে এতটাই বাণিজ্যিকীকরণ করা হয় যে, সেখানে শিক্ষার মান নেই বললেই চলে। আর ভর্তির পরে বের হয়ে অন্য কোথাও পড়তে চাইলে কারোরই সাহায্য পাবে না। ৪ বছরের অর্ধেক টাকা দিয়ে পরে বের হতে হবে। সুতরাং ভর্তির আগেই সকল ব্যাপারে পূর্ণাঙ্গ জেনে তারপর ভর্তি হবে।
প্রথমত, কোন ডিসকাউন্ট, টাকা কম নেয়ার কথায় প্ররোচিত হবে না একদমই। কারণ যে শিক্ষক দ্বারা তুমি প্ররোচিত হতে যাচ্ছো, আগামী ৪-৫ বছর তার পিছেই তোমার ঘুরে ঘুরে প্রাইভেট পড়তে হবে। যে টাকা তুমি কম দিচ্ছ তা সুদে আসলে তোমার থেকে তুলে নিবে। একটা বিষয় খেয়াল রাখবে, মানসম্পন্ন শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান কখনই ছাত্র ভর্তির জন্য ডিসকাউন্ট অফার করবে না।
তবে Scholarship বলে একটা কথা আছে, ভালো রেজাল্টের জন্য যদি প্রাতিষ্ঠানিকভাবে Scholarship প্রদান করে এবং ইতিপূর্বে সেখানে অধ্যয়নরত কেউ যদি Scholarship পেয়েও থাকে তাহলে তা সাদরে গ্রহণ করতে পারো।
দ্বিতীয়ত, যেখানে ভর্তি হবে সেখানে পড়াশুনা করে বড় ভাই-বোন কোনো ভালো প্রতিষ্ঠানে আছে কিনা খোঁজ নিবে। প্রতিষ্ঠানের মুখের কথায় না। দরকার হলে সেই বড় ভাই-বোনের সাথে দেখা করে তাদের অভিমত জানবে। প্রাতিষ্ঠানিক কোন দূর্বলতা থাকলে আক্ষেপটা তাদের মুখ থেকেই শুনতে পারবে।
তৃতীয়ত, সেখানকার Immediate senior ব্যাচের ভাই-বোনদের থেকে জেনে নিবে স্যারদের কাছে প্রাইভেট পড়তে হয় কিনা। বড়দের কাছ থেকে যদি এতটুকু শুনতে পাও যে, "যার ইচ্ছা প্রাইভেট পড়বে, যার ইচ্ছা পড়বে না। প্রাইভেট পড়তে কেউ জোর করে নি।" তাহলেই বুঝবে প্রশাসনিক ঘাটতি আছে। তোমাকেও কোন না কোন একদিন প্রাইভেট পড়তে যেতেই হবে। তোমার সার্কেলের সবাই প্রাইভেট পড়লে তুমিও নিশ্চয়ই বাদ যাবে না। র্যাংকিং এ এগিয়ে থাকা কলেজগুলোতে প্রাইভেট নিষিদ্ধ। কোন স্যার পড়ালে তার চাকরী থাকবে না।
চতুর্থত, সেই কলেজে কোন Debating Club, Sporting Club, Language Club, Cultural Club আছে কিনা। যদি থাকে তাহলে সেগুলোর কার্যক্রম চলছে কিনা। অর্থাৎ সেগুলো চালু আছে কিনা বা চলমান কিনা। গ্রাজুয়েশন লাইফে ক্রিয়েটিভ অনেক চিন্তা কাজ করবে, নিজেকে তুলে ধরতে ইচ্ছে করবে। কলেজে যদি সেইরকম প্লাটফর্ম ই না থাকে তাহলে শিক্ষা জীবনে কোন প্রাণ থাকবে না। শুধুমাত্র বই পুস্তকের জ্ঞানই জ্ঞান নয়।
পঞ্চমত, সেখানে নিয়মিত Presentation, Assignment হয় কিনা সেটাও জেনে নিবে। এই জন্য ৭ম সেমিষ্টার বা পাশ করা বড় ভাই-বোনদের থেকে জেনে নিবে। অনেকেই Presentation, Assignment দেয়ার ভয়ে ও প্রতিদিন উপস্থিত হওয়া থেকে বাঁচতে ভালো কলেজে এডমিশন নেয় না। এই মারাত্মক ভুলটা আমিও করেছি। যার ফলাফল অনেকদিন বেকারত্বের স্বাদ গ্রহণ করে চলতে হয়। একটা ছেলে বা মেয়ে পার্ট টাইম হিসেবে Sales Representative হতে পারে, শত শত অচেনা মানুষের সাথে কথা বলতে পারে। কিন্তু ক্লাসে পরিচিত বন্ধুদের সামনে নিজেকে উপস্থাপন করতে ভয়, লজ্জা পায়। জড়তা থাকে বলেই Multinational Firm গুলোতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পাশ করা ছেলে মেয়েদের ঠাঁই হয় না। তাই নিয়মিত উপস্থিত হওয়া ব্যাপারে কড়াকড়ি করা কলেজ গুলো ক্যারিয়ার গঠনে সহায়ক হয়, Presentation ও Assignment নিজের জড়তা দূর করে।
সর্বশেষ, শিক্ষাবান্ধব একটা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা সহায়ক উপাদান থাকবে। সেখানে ভালো একটা লাইব্রেরী আছে কিনা, কম্পিউটার ল্যাব আছে কিনা, শিক্ষার্থীদের কমন রুম আছে কিনা, দৈনিক পত্রিকা পড়ার ব্যবস্থা আছে কিনা, ইনডোর গেমসের ব্যবস্থা আছে কিনা এবং বিশুদ্ধ খাবার পানি ও স্বাস্থসম্মত শৌচাগার আছে কিনা। সর্বশেষ বিষয়টা অনেকের কাছে হাস্যকর মনে হলেও এটাই সত্যি যে আমি যদি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাধীন, মুক্ত ও উন্নত চিন্তা করতে যাই তাহলে আমার মানসিক সুস্থতা জরুরী।
উপরের সকল বিষয়ই র্যাংকিং বিহীন কলেজগুলোর জন্য বলা। ১ম সেমিষ্টারে ভর্তির পরেই সর্বশেষ সেমিষ্টার হিসেবে ৭ম সেমিষ্টারের ভাই-বোনদের পাবে। সুতরাং ভর্তির পূর্বে তাদের থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে পারো এবং সেখান থেকে পাশ করে বর্তমানে কোথাও চাকুরীরত আছে এমন ভাই-বোনদের সাহায্য নিতে পারো। বিশ্ববিদ্যালয়ে জানার ব্যাপারে কোন সিনিয়র ভাই-বোনদের দ্বারে গেলে বিরক্ত হবে না আশা করি।
আরেকটা কথা, কারো যদি পার্ট টাইম জবের ইচ্ছা থাকে তাহলে অনার্স বা ডিগ্রি নিয়ে পড়তে পারো, কারণ যে কলেজ উপস্থিতির ব্যাপারে কড়াকড়ি করছে না, সে কলেজ বা শিক্ষক তোমাকে আপাতত সাহায্য করছে বলে মনে হলেও বিশাল ক্ষতির দিকে তোমাকে ঠেলে দিচ্ছে। আর মানসিকতা শক্ত রাখবে, প্রফেশনাল বিবিএ পড়তে এসেছো মানে কারো দয়া দাক্ষিন্যের পাত্র নও তুমি। ৬ মাস অন্তর অন্তর ১৫-২০ হাজার সেমিষ্টার ফি দিবে তুমি। এরপরেও কারো কাছে বিষয়ভিত্তিক প্রাইভেট পড়াটা অর্থের অপচয় ছাড়া কিছু নয়। পাবলিকে চান্স না পাওয়া মানে হেরে যাওয়া না আর মানসিক দূর্বলতা কোন বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকের কাছে না প্রকাশ করাই শ্রেয়।
শুভ কামনা থাকলো নতুন কলেজে।
মোহাম্মদ আসিফ নূর
সাবেক শিক্ষার্থী,
প্রফেশনাল বিবিএ
শিক্ষাবর্ষঃ ২০১৪-২০১৫